তথ্য প্রযুক্তি

২০২২ সালের আইফোনের ফিচারসমূহ

আইফোন বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় এবং প্রতিবছর নতুন মডেল রিলিজ হলে সবাই খুব এক্সাইটেড হয়ে যান। কারন নতুন মডেল মানেই নতুন সব ফিচার। কিন্তু আইফোনের ফিচার বা কনফিগারেশন এর যে টার্ম গুলো আছে এগুলো আমরা অনেকেই বুঝি না। যেমন, সুপার রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লে, 1200 nits ! এটা দ্বারা এপল আসলে কি বুঝিয়েছে? তাই চলুন আজকের এই পোস্টে এপলের আরো কিছু টার্ম সম্পর্কে জেনে আসি।

১. Super Retina XDR display:
রেটিনা ডিসপ্লে টা কি? ২০১০ সালে স্টিভ জবস যখন আইফোন 4 এর ঘোষনা করেন, তিনি জানান যে, আমরা নরমালি চোখের যতদূরে মোবাইল রেখে দেখি, সেই দুরত্বে ৩২৬ppi এর ডিসপ্লে তে পিক্সেল গুলো আলাদাভাবে বোঝা যায় না। তাই এরকম ডিসপ্লে কে এপল বলছে রেটিনা ডিসপ্লে। সেসময় আইফোনের ডিসপ্লে ছিলো LCD প্যানেল। আইফোন 10 এর পর থেকে সব আইফোনের ডিস্প্লে হচ্ছে এপলের বিশেষভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং করা ওলেড ডিসপ্লে (Apple Custom OLED) যেগুলোর কন্ট্রাস্ট, ব্রাইটনেস অনেক বেশি এবং অনেক বেশি পরিমান কালার প্রদর্শন করতে পারে। এপল এগুলোকে মার্কেটিং করা শুরু করেছিলো “সুপার রেটিনা ডিসপ্লে” বলে। অর্থাৎ এপলের এলসিডি ডিসপ্লে হচ্ছে রেটিনা ডিসপ্লে, আর সুপার রেটিনা হচ্ছে ওলেড ডিস্পলে! আর iPhone 11 pro তে তারা প্রথমবার HDR supported ওলেড ডিসপ্লে নিয়ে আসে যেটাকে তারা super retina XDR display হিসেবে ইন্ট্রোডিউস করে। XDR হচ্ছে Extended Dynamic Range এর শর্টফর্ম। XDR display গুলো অনেক বেশী পরিমাণে ব্রাইট হয়, যা রোদে সরাসরি সূর্যের আলোতেও মোবাইল ব্যাবহার করতে সাহায্য করে।
এটা হচ্ছে এপলের মার্কেটিং টার্ম। এর সাথে আরো একটা বিষয়, 2,000,000:1কন্ট্রাস্ট রেশিও । ডিসপ্লে সিস্টেম এর একটা অংশ হচ্ছে কন্ট্রাস্ট রেশিও। বেশি কন্ট্রাস্ট রেশিও হওয়ার কারণে ফোনের ব্রাইটনেস বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় কারণ সাদা এবং কালোর ডিফারেন্স টা বোঝা যায় ভালো করে। Dolby Vision, HDR10, HLG হচ্ছে HDR এর কিছু টেকনোলজি।

২. True Tone:
ট্রু টোন হচ্ছে একটা টেকনোলজি। এতে ডিসপ্লে এর উপরে সেন্সর থাকে যেটা থেকে ডাটা নিয়ে ডিসপ্লে নিজেই বিভিন্ন রকম লাইটিং কন্ডিশনে ডিসপ্লে টেম্পারেচার চেঞ্জ করে ফেলে, যেনো সাদা কে সবসময় সাদা দেখা যায়। যারা বোঝেন নি তাদের জন্য বলি, রোদেলা দিনে সাদা রঙের যেকোন কিছু দেখবেন একটু হলুদ দেখাচ্ছে, আবার মেঘলা দিনে একটু নীলচে মনে হয়। এটা হয় লাইটিং কন্ডিশন এর জন্য। ট্রু টোন টেকনোলজি তে ডিসপ্লে সবসময় একই রকম কালার টোন দেখাবে । ওয়ার্ম ও না, আবার কোল্ড ও না।

৩. Haptic Touch:
iPhone এ আগে ছিলো 3D Touch technology যেটাতে বিভিন্ন লেভেল এর প্রেসার এ বিভিন্ন একশন বা জেসচার এনাবল হতো। যেমন ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক প্রিভিউ করতে সেটা হালকা প্রেসারে চেপে থাকতে হতো, লিঙ্কে ঢুকতে চাইলে হার্ড প্রেস করে চেপে থাকতে হতো, কোনো ছবি ডিলেট করতে চাইলে বেশ কিছুক্ষণ সেটা জোরে প্রেস করে চেপে থাকতে হত ইত্যাদি।
আর Haptic Touch ফিচারটি এপল প্রথম ইন্ট্রোডিউস করে ২০১৮ সালে iPhone XR এ । এতে টাচ এন্ড হোল্ড জেসচার ইউজ করা হয় এবং এতে Taptic Engine নামের ইলেকট্রনিক মোটর বেজড একটা ডিভাইস আছে যেটা ডিসপ্লে তে টাচ করে হোল্ড করে থাকলে একটা হ্যাপটিক ফিডব্যাক দেয়, ভাইব্রেশন এর মত। এই Haptic Touch সিস্টেমটি অনেক স্মুথ, ফাস্ট এবং একুরেট।

৪. Wide color Gamut
Wide Color Gamut বা WCG হচ্ছে বাস্তব জীবনের মত কালার। লালকে আরও বেশী লাল, সবুজ কে বেশি সবুজ ও নীলকে বেশি নীল দেখায়। এবং এটা রিয়েল লাইফের যেকোনো বস্তুর আসল কালার এর মতই কালার প্রদর্শন করে ডিসপ্লেতে।

৫. 1200 nits peak HDR brightness:
ডিসপ্লে কতটুকু উজ্জ্বল সেই ব্রাইটনেস পরিমাপের একটা একক হচ্ছে নিট , ১ নিট= ১ক্যান্ডেলপাওয়ার/স্কয়ার মিটার (1cd/m^2) । দুপুর বেলায় সুর্যের আলোর উজ্জলতা হচ্ছে ১.৬ বিলিয়ন নিটস।
তো, মোবাইলের ডিসপ্লে যত উজ্জ্বল হবে দিনের আলোতে সেটা দেখতে তত সুবিধা হবে, নইলে তো অনুজ্জ্বল ডিসপ্লে সুর্যের আলোতে কিছু দেখা ই যাবে না। এখন, নরমালি মিডরেঞ্জের মোবাইলগুলোর ডিসপ্লে গুলো ৬০০-৮০০-১০০০ এরকম নিটস অফার করে। আইফোন ১৪ এবং ১৪ প্লাস এ ১২০০ নিটস অফার করছে এটা হচ্ছে পিক ব্রাইটনেস মানে সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস। এখানে HDR উল্লেখ করা আছে অর্থাৎ HDR কন্টেন্ট এ ও এই ব্রাইটনেস এ দেখা যাবে।

৬. HDR
ন্যাচারাল অনেক সিন এ দেখবেন আকাশ অনেক উজ্জ্বল আর গাছপালার নিচে অনেক অন্ধকার ছায়া। HDR হচ্ছে একটা প্রসেস যেখানে আকাশের উজ্জলতা কমিয়ে এবং গাছপালার এই ছায়ার অংশে উজ্জলতা বাড়িয়ে একটা সুন্দর আউটপুট দেয় যেটার ওভারঅল ব্রাইটনেস ব্যালান্সড করা। আধুনিক ক্যামেরাগুলো HDR record করতে পারে, এবং মনিটর/ ডিসপ্লে এইরকম কন্টেন্ট কে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।

৭. Ceramic Shield
এপল বলছে এই সিরামিক শিল্ড প্রটেকশন নরমাল গ্লাস প্রটেকশন এর চেয়ে বেশী শক্তিশালী, হাত থেকে পড়ে গেলে ফোনের ক্ষতি হবে না। এই সিরামিক শিল্ড হচ্ছে ceramic nanocrystals এর দ্বারা তৈরি যা অনেক বেশি অপটিক্যালি ভিজিবল এবং একই সাথে ডিউরেবল

৮. Brighter True tone flash: অর্থাৎ ফ্ল্যাশ এর আলোর টেম্পারেচার সিচুয়েশন অনুযায়ী নিজেই ওয়ার্ম/কোল্ড হবে।

৯. ক্রাশ ডিটেক্টশনঃ কোনো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে আইফোন সেটা ডিটেক্ট করতে পারে এবং তাৎক্ষনিক ৯১১ বা ইমার্জেন্সি নাম্বারে কল দিয়ে সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়।

১০. MagSafe: আইফোনের পেছনের ওয়্যারলেস চার্জিং এর জন্য যে চার্জিং কয়েল আছে তার চারপাশে অনেকগুলো ম্যাগনেট লাগানো আছে যেগুলো ওয়্যারলেস চার্জার এর সাথে শক্তভাবে কানেক্ট হয় এবং চার্জার কে সঠিক প্লেস এ রাখতে সাহায্য করে।

১১. ডাইনামিক আইল্যান্ডঃ এটি একটি এনিমেটেড ফিচার। যার মাধ্যমে ফ্রন্ট ক্যামেরা নচ এর আশেপাশের এরিয়া জুড়ে এনিমেটেড বার এ বিভিন্ন এপস এর নোটিফিকেশন ও ইনফোর্মেশন প্রদর্শন করে।

১২. Apple Pro RAW: এটি হচ্ছে ক্যামেরায় ছবি তোলার পর সব ইনফোর্মেশন নিয়ে যে RAW ফাইল তৈরি হয়, এটা এপলের নিজস্ব RAW ফরম্যাট।

১৩. ProMotion: আইফোনের ডিসপ্লে ডাইনামিক্যালি রিফ্রেশরেট চেঞ্জ করতে পারে বিভিন্ন কন্ডিশনে এবং ব্যাটারি সেভ করার জন্য। তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার টেকনোলজি কে তারা নাম দিয়েছে “ProMotion” ।

১৪. LTPO technology: Low-Temperature Polycrystalline Oxide ব্যাকপ্লেন টেকনোলজি। যার মাধ্যমে এপল তাদের OLED ডিসপ্লে গুলোতে ভ্যারিয়েবল রিফ্রেশরেট পেয়ে থাকে।

১৫. Photonic Engine: এটা হচ্ছে এপলের নতুন ক্যামেরা টেকনোলোজি যা এর আগের এপলের Deep Fusion Image Processing Technology এর বর্ধিত রূপ, এতে লো লাইট/ স্বল্প আলোয় ক্যামেরা পারফর্ম্যান্স অনেক বেশি ইম্প্রুভড হয়েছে।

Leave a Reply

Back to top button