খাদ্য ও পুষ্টি

দেহ গঠনে প্রোটিনযুক্ত খাবার

আমাদের শরীরের প্রধান উপাদান অ্যামাইনো এসিড। এই অ্যামাইনো এসিড থাকে প্রোটিনের মধ্যে। সুতরাং প্রোটিন হচ্ছে এক ধনের অ্যামাইনো এসিড যা দেহ গঠন ও কোষকলা তৈরিতে সাহায্য করে। সেজন্যই প্রোটিনের এত কদর, এত গুরুত্ব। প্রোটিন প্রধানত দুই রকমের। যথা : প্রাণিজ প্রোটিন- দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি; উদ্ভিজ প্রোটিন- চাল, ডাল, শিম, সয়াবিন, বাদাম ইত্যাদি। শরীর গঠনের জন্য মোট ২২ রকমের অ্যামাইনো এসিড লাগে। এসব অ্যামাইনো এসিডের মধ্যে মানুষের শরীর থেকে তৈরী হয় ১৩ রকমের অ্যামাইনো এসিড। বাকি ৯ ধরনের অ্যামাইনো এসিড শরীর তৈরী করতে পারে না। এগুলো খাবারের মাধ্যমে শরীরে আসে। এই ৯টি অ্যামাইনো এসিডকে এসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড বলা হয়। ডিম, মাছ, গোশত আর দুধে অর্থাৎ প্রাণিজ প্রোটিনে সবগুলো এসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড থাকে। সেজন্যই এসব খাবারকে ফার্স্ট ক্লাস কমপ্লিট প্রোটিনের পর্যায়ে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে চাল, গম, ডাল, শাকসবজি ও ফলে সবক’টি এসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড এক সাথে পাওয়া যায় না। তাই এসব নিরামিষ খাবার-দাবারকে এতদিন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ বা দ্বিতীয় শ্রেণীর খাবারের পর্যায়ে ফেলা হ’ত। প্রাণিজ প্রোটিনের মূল্য বেশী হওয়ায় বিধাতা গরিবদের জন্যও অল্পমূল্যে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। দেখা গেছে দু’তিনটি নিরামিষ খাবার ঠিক মাত্রায় একত্রিত করে রান্না করলে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন সম্পূর্ণ পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় চাল ও ডাল একসাথে খিচুড়ি রান্না করে খেলে বা ডাল-ভাত সবজি একত্রে খেলে তা কোন অংশেই মাছ-ভাত বা গোশত-ভাতের চেয়ে কম হবে না। একইভাবে সয়াবিনের তরকারি, অন্যান্য সবজি ও রুটি খেলে উচ্চমানের প্রোটিনই শরীরে যাবে। পুষ্টিমান বিচার করে দেখা গেছে গোশত ও মসুর ডালের পুষ্টিমূল্য প্রায় সমান সমান। সব থেকে মজার ব্যাপার হ’ল মাছ-গোশতের চেয়ে দুধের নেট প্রোটিন ইউটিলাইজেশন বা NPU অনেকটাই বেশী। যেমন- মাছ ও গোশতের NPU যথাক্রমে ৭৮ ও ৭৬, সেই তুলনায় দুধের ৮৫। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন খাবারের মধ্যে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যের প্রোটিন উৎকৃষ্ট। দুধ থেকে তৈরী দই অত্যন্ত উপকারী। দইয়ের প্রোটিন সহজেই হজম হয়। সয়াবিন থেকেও দুধ, দই, ছানা ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্ত্তত করা যায়। যার পুষ্টিমান গরুর দুধ, দইয়ের কাছাকাছি। শিশু-বৃদ্ধ সবার দেহের গঠন এবং ক্ষয় পূরণের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত যরূরী উপাদান। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খাওয়ার পর তা পাকস্থলীতে পাচক রসের সাহায্যে ভেঙ্গে অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়, যা শোষণের পর রক্তে বাহিত হয়ে প্রতিটি কোষের পুষ্টি যোগায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা ৬০ গ্রাম অথবা প্রতি কেজি ওযনের জন্য ১ গ্রাম হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি পাউন্ড ওযনে ০.৫ গ্রাম ধরে দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে। এ সময় প্রোটিনের অভাব হ’লে শিশুর কোয়াশিওরকার বা ম্যারাসমাসের মতো অপুষ্টির শিকার হ’তে পারে। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসূতি মায়েদের প্রোটিনের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী। তাই দেহ গঠন এবং ক্ষয় পূরণের জন্য আমাদের দৈনিক চাহিদামাফিক প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button