খাদ্য ও পুষ্টি

আমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক

আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আম খেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। কেবল স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় নয়, পাকা ও কাঁচা উভয় আমেই রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। দু’ধরনের আমই শরীরের জন্য ভালো। আম কাঁচা বা পাকা যা-ই হোক না কেন, পরিমিত গ্রহণ করলে শরীরের ওপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।

আমের উপকারিতা

১. আম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানে সমৃদ্ধ। কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান স্তন ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, লিউকোমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

২. ফলটি ভিটামিন এ, সি এবং ই-এর ভালো উৎস, যা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

৩. আমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণসহ হার্ট ভালো রাখে। খাবার পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, পানি, খাদ্য আঁশ ও অন্যান্য উপাদান থাকার কারণে এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্যও উপকারী।

৪. বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, এতে বিদ্যমান ক্যারোটিন গ্রহণ করলে সেগুলো ফুসফুস ও মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

৫. এতে ভিটামিন বি-৬ পাওয়া যায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে ও কিছু জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।

৬. আম তারুণ্য ধরে রাখতে কার্যকর। আমে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেনের উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে ত্বক সতেজ ও টান টান হয়।

৭. আমে থাকা বিভিন্ন উপাদান কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৮. ফলটি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।

আমের কিছু ক্ষতিকর দিক

অ্যালার্জি বাড়তে পারে : আম খেলে বাড়তে পারে অ্যালার্জি। কারণ আমে প্রোটিন ল্যাটেক্সের মতো উপাদান রয়েছে যা অ্যালার্জি আছে এমন কারো জন্য ক্ষতির কারণ হ’তে পারে।

রক্তে শর্করা বৃদ্ধি তথা ডায়াবেটিস বাড়তে পারে : মিষ্টি এবং সুস্বাদু এই ফলে উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে এটি দ্রুত চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক চিনিও ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার ব্যাধির ক্ষেত্রে সাধারণ চিনির মতোই কাজ করতে পারে। সুতরাং আম খাওয়ার সময় এর পরিমাণের দিকে অবশ্যই নযর রাখতে হবে।

তবে ডায়াবেটিস রোগীরা যে আম খেতে পারবেন না তা নয়। তবে ভরপেট খাওয়ার পরে দুপুরে বা রাতে আম খেলে তার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে। সেক্ষেত্রে হিসাব করে আম খেতে হবে। যেদিন সকালের নাশতায় আম খাওয়া হচ্ছে, সেদিন দুপুরে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। দেখতে হবে শরীরে জমা অতিরিক্ত ক্যালরি যেন ঝরিয়ে ফেলা যায়। পাকা মিষ্টি আম একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম খেতে পারেন। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা অর্ধেক আম খাওয়া যাবে।

লো-ফাইবার : বিভিন্ন জাতের আমে ফাইবার কম থাকে। কারণ বীজ এবং খোসায় সর্বাধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যে কারণে আম হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য নাও করতে পারে। তাই হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতে আমের সাথে ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ন বৃদ্ধি : একসঙ্গে অনেকগুলো আম খেলে ওযন বাড়তে পারে। এর কারণ হ’ল অন্যান্য খাবারের তুলনায় আমে ফাইবার কম, প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বেশী এবং ক্যালোরি বেশী, যা ওযন বাড়াতে পারে। তাই ওযন কমানোর প্রচেষ্টায় থাকলে আম খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হ’তে হবে।

পেটের সমস্যা হতে পারে : অতিরিক্ত আম খেলে তা পেটের সমস্যার কারণ হ’তে পারে। কারণ এতে গাঁজনযোগ্য কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) বাড়াতে পারে এবং পাচনতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button