খাদ্য ও পুষ্টি

মাছের খাদ্যগুণ ও উপকারিতা

ভোগ্যপ্রাণীর মধ্যে মাছ বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য এবং আমিষের প্রধান উৎস। সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় ২৫ হাযার প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মিষ্টি পানিতে ২৬০ প্রজাতির এবং লোনা পানিতে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। নদী-নালার আধিক্য থাকায় প্রাকৃতিকভাবে এদেশে বিপুল পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়।

উপকারিতা :

  • মাছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ পাওয়া যায়। এছাড়াও মাছে চর্বি, খনিজ তেল, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত মাছ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চোখের অসুখ, হাত-পা ব্যথা, শরীরের দুর্বলতা ইত্যাদি রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রতিদিন একশ গ্রাম করে তাজা মাছ খেলে পাঁচ থেকে ছয় পয়েন্ট উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
  • মাছের তেলে থাকা ডকসা হেক্সোনিক অ্যাসিড এবং এলকোসা পেন্টাএনোইক অ্যাসিড মগজের বিকাশ ঘটায়। মাছ রক্ত বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। মাছ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। মাছে ওমেগা-থ্রি নামের এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হৃদযন্ত্রের ধমনীগুলোকে নমনীয় করে রাখতে সাহায্য করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এই ধরনের অ্যাসিড বেশী থাকা কয়েকটি মাছ হ’ল ইলিশ, ভেটকি, পমফ্রেট, শিঙ এবং হরদে থাকা মাছ।
  • রোজ মাছ খেলে বাতের ব্যথা কমে। বাতের ব্যথায় হওয়া জ্বরের উপশম ঘটায়। বায়ুশ্বাসী মাছ যেমন শিঙ, মাগুর ইত্যাদি মাছে যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন ও তামা থাকায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ করে রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রক্তহীনতায় ভোগা মানুষদের শিঙ ও মাগুর মাছ খেতে হয়। এছাড়া খলসে, গড়াই ও কুচে ইত্যাদি মাছে অ্যাখোসিড অ্যাসিড থাকায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তক্ষরণ হ’লে সহজে রক্ত বন্ধ হয়।
  • মাছ ঘা শুকাতে সাহায্য করে। যে কোনও মাছে অতি প্রয়োজনীয় ডিএইচএ এবং ইপিএ থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপযুক্ত ডিএইচএ এবং ইপিএ সেবন করা অতি উপকারী। নিয়মিত মাছ খেলে মগজে ডিএইচএ-র পরিমাণ বাড়ে। এতে হতাশা ও আত্মহত্যার প্রবণতা কমে এবং ইতিবাচক দিকের বিকাশ হয়, স্মৃতিশক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে। এছাড়া মাছের তেল যে কোনও ধরনের ব্যথা নিরাময় করতে পারে এবং ক্যানসারের মতো রোগ নিরাময় করতে পারে। প্রতিদিন ২.৫ গ্রাম করে মাছের তেল খেলে স্তন ক্যানসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • সামুদ্রিক মাছে যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন থাকে, তাই এই মাছ খেলে মানুষের গলগন্ড রোগ হয় না। আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানী চিকিৎসায় বেশ কয়েক প্রকার মাছের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। হাঙ্গর মাছ খেলে গলার ঘা শুকায়। এছাড়া একাংশ এমন মাছ রয়েছে, যা খেলে ত্বকের রোগ সারে। পাশাপাশি রাতকানা রোগ, শরীর দুর্বল লাগা, খিদে না পাওয়া, সর্দি, কাশি, কফ, হাঁপানী, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাছ খেলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং রোগ আরোগ্য হয়।

কাঁটাসহ ছোট মাছ : কাঁটাসহ ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুটি, ছোট চিংড়ি, কেচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হ’ল ছোট মাছ খেতে হবে কাঁটাসহ চিবিয়ে। তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। কাজেই ছোট মাছ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

উল্লেখ্য, ক্যালসিয়াম আমাদের দেহে হয় না, খাবারের মাধ্যমে এর চাহিদা পূরণ করতে হয়। দৈনিক প্রতিটি মানুষেরই প্রচুর ক্যালসিয়ামের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে-বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা আরো বেশি। হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম খুবই দরকারী। তাই প্রতিদিন আমাদের ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের মধ্যে কাজুলি, বাতাসি, মলা, ঢেলা, দারকিনা ইত্যাদি অন্যতম। গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করে এই ছোট মাছ। আমাদের দেশে গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা ও শিশুরা অকালে অপুষ্টির শিকার হয়। এ অপুষ্টি দূর করতে ছোট মাছ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

শিশুদের জন্য উপকারী ছোট মাছ : অনেক শিশু ছোট মাছে কাঁটা থাকায় এ মাছ খেতে চায় না। আবার অনেকে ছোট মাছের মাথা ফেলে দিয়ে রান্না করে, যা মোটেই উচিত নয়। নতুন খাবার খেতে শিখেছে এমন শিশুদের জন্য ছোট মাছের তরকারী বা বিভিন্ন সবজির সঙ্গে এ মাছ মিশিয়ে রান্না খিচুড়ি খুবই পুষ্টিকর খাদ্য। বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছ শিশুদের জন্য বেশী উপকারী। কারণ এর ক্যালসিয়াম শিশুদের হাড় ও দাঁত মযবূত করে। এছাড়া ছোট মাছ খুব নরম হওয়ায় সহজে রান্না করা যায় এবং তাড়াতাড়ি হযম হয়। সপ্তাহে দু-তিন দিন শিশুদের খাবারের মেন্যুতে ছোট মাছ রাখা উচিত।

সতর্কতা : কিছু কিছু সামুদ্রিক ছোট মাছ যেমন- টুনা, গ্রিম্প, সোর্ড মাছে মার্কারি নামক উপাদান পাওয়া গেছে। এই মার্কারি অতিরিক্ত গ্রহণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদেরও এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button