গরুর ল্যাম্পি চর্ম রোগ
দেশে এলোপ্যাথিক গবেষণার পাশাপাশি হোমিও গবেষণাতেও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। এমনকি গাড়ীতে মাছ পরিবহনের সময় যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তারও সমাধান হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতি দিয়েছে।
বর্তমানে হঠাৎ করে গরুর নতুন রোগ দেখা দিয়েছে যা ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিস’ নামে অভিহিত। এটি সুদূর আফ্রিকা হ’তে আগত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাস রোগটি মহামারী আকার ধারণ করায় খামারী ও কৃষকরা আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গ্রামের গরীব কৃষকের পক্ষে এই রোগের এলোপ্যাথিক চিকিৎসার খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও ভাইরাসজনিত রোগ এন্টিবায়োটিক ও এন্টিহিস্টামিন অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে গর্ভবতী গাভীর গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট হয়ে (Abortion) গর্ভপাত হচ্ছে। তাই কৃষক ভাইদের এলোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। ফলে অল্প খরচে স্বল্প সময়ের চিকিৎসায় অর্থনৈতিকভাবে তারা লাভবান হবেন ইনশাআল্লাহ।
রোগের লক্ষণ :
- প্রথমে গরুর শরীরে জ্বর ও বেদনাবোধ হয়।
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়।
- বুকের নীচে ও পায়ে রস জমে ফুলে যায়।
- ফোলা গুটিগুলি গরম হয় এবং পরে শক্ত হয়।
- ৫-৭ দিনের মধ্যে ফোলা স্থানের চামড়া ফেটে যায় ও ক্ষত হ’তে রসের মত পুঁজ বের হয়।
- ক্ষত স্থানে গরু জিহবা দিয়ে চাটার ফলে ক্ষত দগদগে দেখায়।
- গরু খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং শুকাতে থাকে।
- নাকে ও ফুসফুসে ব্যথা হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়।
- শরীরে ব্যথার কারণে গরু নড়াচড়া কম করে এবং খেতে চায় না।
- গর্ভবতী গাভীর বাচ্চা (Abortion) গর্ভপাত হয়ে মারা যায় এবং ছোট দুর্বল গরুও রোগের তীব্রতায় মারা যায়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা :
- এই রোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সুস্থ গরুকে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নেট্রাম সালফ ২০০ শক্তি ৩-৫ ফোঁটা ডিস্ট্রিল ওয়াটারের সাথে মিশিয়ে সকাল ও বিকেলে খেতে দিবেন (১৫ দিন)।
- অথবা ক্যালকেরিয়া কার্ব ২০০ শক্তি ঔষধ উপরোক্ত নিয়মে খাওয়াবেন (১৫ দিন)।
বিঃদ্রঃ ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসক লক্ষণ অনুসারে উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করবেন।
চিকিৎসা ব্যবস্থা :
রোগটি যেহেতু ভাইরাস জনিত ও গ্রন্থিতে আক্রমণ করে তাই নির্বাচিত ঔষধের উচ্চতর শক্তি ব্যবহার করতে হবে।
১. হিপার সাফল : ক্ষতস্থানের পুঁজ সাদা হ’লে এবং ব্যথা থাকলে সকালে ও বিকালে ৩-৪ ফোঁটা ঔষধ ২৫০ মিলি ডিস্ট্রিল ওয়াটারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
২. রাসটক্স : যদি ক্ষতস্থানে গরু জিহবা দ্বারা চেটে দগদগে লাল করে ফেলে, তবে এই ঔষধ পূর্বে বর্ণিত নিয়মে খাওয়াতে হবে।
৩. এসিড নাইট্রিক : ক্ষতগুলি গভীর ও লাল দগদগে হ’লে এই ঔষধ পূর্বে বর্ণিত নিয়মে খাওয়াতে হবে।
৪. সাইলিশিয়া : ক্ষতস্থান হ’তে পানির মত পাতলা রক্ত পূঁজ বের হ’তে থাকলে এই ঔষধ পূর্বে বর্ণিত নিয়মে খাওয়াতে হবে।
নিয়মাবলী/সেবন বিধি :
২০০ শক্তি অথবা ১০০০ শক্তি ঔষধ ৩-৪ ফোঁটা ২৫০ মিলি ডিস্ট্রিল ওয়াটারে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খাওয়াতে হবে। (মোট ৫-৭ দিন)
হোমিও ঔষধ সেবনের সুবিধা :
- খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগাক্রান্ত গরু সুস্থ হয়।
- গর্ভবতী গাভীর গর্ভস্থ বাচ্চা নষ্ট হয় না।
- ঔষধ খাওয়ানোর পদ্ধতি খুব সহজ।
- চিকিৎসককে বার বার আক্রান্ত গরু দেখানোর দরকার হয় না।
- চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সহজলভ্য হওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় স্বল্প।
- এন্টিবায়োটিক ও এন্টিহিস্টামিনের ব্যবহার না থাকায় আক্রান্ত গরুর রোগ পরবর্তী সুস্থ অবস্থায় দুধ ও গোশত খাওয়া নিরাপদ।
সতর্কতা :
- রোগাক্রান্ত পশু হ’তে সুস্থ পশুকে আলাদা করে রাখতে হবে।
- আক্রান্ত পশু জিহবা দ্বারা যদি ক্ষতস্থান চাটে তবে সেই গরুকে কোন সুস্থ পশুর শরীর চাটতে দিবেন না।
- আক্রান্ত পশুর সেবা করার পর নিজের শরীর জীবাণুনাশক যেকোন লিকুইড দিয়ে ভালভাবে ধৌত করবেন।
- রোগাক্রান্ত পশুকে (এলার্জীযুক্ত খাদ্য) মসুর ও কালাই-এর ডাইল ও ভূষি খাওয়ানো হ’তে বিরত রাখবেন।