স্বাস্থ্য পরামর্শ

মেদ কমাতে কাঁচা পেপে

পেঁপের রয়েছে নানা গুণ। মেদ সমস্যায় কাঁচা পেঁপে সালাদ হিসাবে খেলে উপকার পাওয়া যায়। পেটের গোলমালে পেঁপে খেলে উপকার হয়। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁপেতে ক্যারোটিন অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ বেশ কম থাকায় মেদ সমস্যায় পেঁপে খেলে ফল পাওয়া যায়। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে।

সালাদে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে টমেটো, শসা, গাজর, কাঁচামরিচ, পিঁয়াজ, লেটুসপাতা স্থান পায়। এসব সবজির মিশ্রণে তৈরী সালাদে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ই’র পরিমাণ থাকায় এ ধরনের সালাদ এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। তবে সালাদে কাঁচা পেঁপে মেশানো হ’লে তা আরও উপকারী হয়। কারণ পেঁপেতে থাকে প্রচুর পরিমাণ পেপসিন। এই পেপসিন হজমে সাহায্য করে। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। কাঁচা পেঁপের কষ বাতাসার সঙ্গে খেলে লিভার সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর হয়। এর সঙ্গে ক্ষুধা বাড়ে এবং জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। অপরদিকে পেঁপের রসে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাশয়, অশ্ব, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সক্ষম। পেঁপে খেলে শরীর থেকে দূষিত বায়ু সহজেই বেরিয়ে যায়। কাঁচা পেঁপের তরকারি পথ্যের কাজ করে।

চিকিৎসকরা ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের কাঁচা পেঁপের তরকারি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অপরদিকে কাঁচা পেঁপের কষ ঘা শুকাতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে লিভারের জটিল সমস্যা দূর করে। পাচন শক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন কাঁচা পেঁপের তরকারি বা পাকা পেঁপে খাওয়া শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে পেঁপে অন্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর। পাকা পেঁপে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ। কাঁচা পেঁপেতেও ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি’ এবং ভিটামিন ‘সি’ আছে। এছাড়া কাঁচা বা পাকা পেঁপেতে লৌহ ও ক্যালসিয়াম আছে। পেঁপে কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

পেঁপের ঔষধি গুণ সমূহ

রক্ত আমাশয় : প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।

ক্রিমি : যে কোন প্রকারের ক্রিমি হ’লে পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘণ্টা পরে উষ্ণ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।

আমাশয় : আমাশয় ও পেটে যন্ত্রণা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রণা এবং আমাশয় কমে যাবে।

যকৃত বৃদ্ধিতে : এই অবস্থায় ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩ বার খেতে হবে। ৪/৫ দিন পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে। তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

ক্ষুধা ও হজম শক্তিতে : প্রত্যেক দিন সকালে ২/৩ ফোঁটা পেঁপের আঠা পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ক্ষুধাও বেড়ে যাবে এবং হজমও ঠিকভাবে হবে।

পেট ফাঁপায় : কয়েক টুকরো পাকা পেঁপের শাঁষ, সামান্য লবণ এবং একটু গোলমরিচের গুড়া এক সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা পেট ফাঁপার উপশম হয়।

প্রবল জ্বরে : দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এতে জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রণা, শরীরে দাহ কমে যাবে। জ্বর কমে গেলে আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

মাসিক ঋতু বন্ধে : যাদের মাসিক ঋতু বন্ধ হওয়ার সময় হয়নি অথচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা যেটুকু হয় তা না হওয়ারই মত, সেক্ষেত্রে ৫/৬ টি পাকা পেঁপের বিচি গুড়া করে রোজ সকালে ও বিকালে দু’বার পানিসহ খেতে হবে। এর ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই মাসিক স্রাব ঠিক হয়ে যাবে। তবে অন্য কোন কারণে এটা বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

দাদে : যে কোন প্রকারের দাদ হোক না কেন, কাঁচা পেঁপের/গাছের আঠা ঐ দাদে লাগিয়ে দিতে হবে। একদিন লাগিয়ে পরের দিন লাগাতে হবে না, এরপরের দিন আবার লাগাতে হবে। এইভাবে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে।

একজিমায় : যে একজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে ওটার চামড়া উঠতে উঠতে পাতলা হয়ে যায়।

উকুন হ’লে : ১ চামচ পেঁপের আঠা, এর সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর ঐ পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এইভাবে একদিন অন্তর একদিন বা ২ দিন লাগালে উকুন মরে যায়।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Back to top button