স্বাস্থ্য পরামর্শ

সুস্বাস্থের জন্য লবণ

শরীরবৃত্তীয় প্রয়োজনে পরিমিত মাত্রার খাবার লবণের যেমন দরকার তেমনি অতিরিক্ততা গুরুতর ক্ষতিরও কারণ। অধিক পরিমাণে খাবার লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেই সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যায়। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে লবণ, খাবার রান্নার মশলা হিসাবেই সমাদৃত। খাবার তৈরিতে লবণ খাবারকে সুস্বাদু করে, উপযুক্ত সিদ্ধ বা নরম করে, পচন রোধ করে। খাবার সংরক্ষণ করতেও (মাছ/গোশত শুঁটকি হিসাবে) লবণ কাজে লাগে। রান্নার লবণ ও খাবার পাত্রে আলগা লবণ আমাদের জন্য লবণের মূল উৎস।

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রয়োজন। অথচ আমরা বাংলাদেশীরা প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৭ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্রহণ করি। ইংল্যান্ড ও আমেরিকানরা প্রতিদিন গড়ে ৯-১০ গ্রাম, চীন এবং জাপানীরা গড়ে ১২-১৪ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্রহণ করে। প্রতিদিন লবণের পরিমাণ বিষয়ে WHO দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম এবং WASH দৈনিক সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম এর বেশী কখনোই গ্রহণ করা উচিত নয় বলে মতামত দিয়েছে। সারা বিশ্বজুড়ে গবেষণাকৃত শতাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ এর সুনির্দিষ্ট শারীরিক লক্ষণ নেই। শুধুমাত্র অতিরিক্ত লবণ সেবনই মানুষকে ঠেলে দেয় উচ্চ রক্তচাপ জনিত অধিকতর গুরুত্বর স্বাস্থ্য সমস্যা-হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও স্থায়ী কিডনী রোগের দিকে। এছাড়াও পাকস্থলীর ক্যান্সার, কিডনীতে পাথর, অস্থি ক্ষয়রোগ, অতিরিক্ত ওযন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস প্রভৃতি রোগের ঝুঁকি অতিরিক্ত লবণ সেবনের দ্বারা বৃদ্ধি পায়। শুধুমাত্র পরিমিত লবণ সেবন করলেই এইসব রোগের ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকা যায়। উল্লেখ্য যে, হিমালয়ের পাদদেশের কিছু গ্রামের মানুষ লবণ সেবন করেন না বলে তাদের উচ্চ রক্তচাপও হয় না। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ না করার জন্য সবাইকে সচেতন হ’তে হবে। ধীরে ধীরে চেষ্টা করলে এটা অভ্যাসে পরিণত করা সম্ভব। এজন্য নীচের কাজগুলো করা যায়- (ক) রান্নাতে অল্প লবণ ব্যবহার করা (খ) ঘরের বাইরে তৈরি খাবার (হোটেলের তৈরি নাস্তা/ফাস্ট ফুড প্রভৃতি) যতদূর সম্ভব পরিহার করা। (গ) কৌটায়/প্যাকেটে সংরক্ষিত খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া। (ঘ) সব ধরনের সস, পনির ও কোমল পানীয় কম পরিমাণে গ্রহণ করা। (ঙ) প্রতিদিনের খাবারে শাক-সবজি ও কাঁচা ফল রাখা।

সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের পাশাপশি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে এ বিষয়ে মতামত প্রদান করতে হবে। সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে কিশোর এবং যুবকদের প্রতি, যাতে কম বয়স থেকেই তারা অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ না করে গুরুতর অসুস্থতা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে এবং সুস্থ সবল জাতি হিসাবে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে।

আশার কথা এই যে, যেহেতু লবণের সোডিয়াম উপাদানটিই বেশী ক্ষতি করে, তাই লবণ থেকে সোডিয়ামকে সরিয়ে এসকরবিক এসিড বসানোর জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে লবণের স্বাদ ঠিক থাকবে কিন্তু ক্ষতি হবে না।

পরিশেষে পুনরায় বলতে চাই- অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও কিডনি রোগের একটি প্রধান কারণ। সুতরাং কম লবণ গ্রহণ করে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে এবং সুস্বাস্থ্য লাভে সচেষ্ট হওয়া যরূরী।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Back to top button