রোগ ও প্রতিকার

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

জীবন ধারনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ হলো কিডনি। মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র যেমন মানুষের জন্য জরুরি ঠিক তেমনি জরুরি আমাদের দুটি কিডনি। আমাদের শরীরের যাবতীয় ক্ষতিকর অপ্রয়োজনীয় ও বর্জ্য পদার্থগুলো দুটো কিডনির মধ্যে রয়েছে আবার দুটো ছোট ছোট স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাবরেটরি। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দু লিটার মূত্র তৈরি হয় এই ল্যাবরেটরিগুলোতে। এই মূত্রে থাকে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যেগুলো শরীরে জমা হয়ে থাকলে আমাদের শরীর হয়ে উঠত বিষাক্ত, রক্ত হয়ে পড়ত দূষিত।

মুত্রতন্ত্রের যেকোনো অংশে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয় তাহলে সেটাকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বলা হয়। কিডনি, মূত্রনালি একাধিক অংশে একসঙ্গে এই ধরণের ইনফেকশন হতে পারে। এই ইনফেকশনকেই সংক্ষেপে ইউরিন ইনফেকশন বলা হয়। সাধারণত এই সমস্যাটি নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যে হলেও নারীদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ:

১. প্রস্রাবে বাজে গন্ধ।

২. বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৩. প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে হওয়া।

৪. তলপেটে বা পিঠে তীব্র ব্যথা।

৫. একটু পর পর প্রস্রাব লাগা কিন্তু ঠিক মতো না হওয়া।

৬. প্রস্রাব করার সময় জ্বালা পোড়া বা ব্যথা করা।

৭. সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব অথবা কাঁপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর হওয়া।

যদিও নারীরাই বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবুও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে গরমের দিনে খুব সহজেই মূত্রাশয়ের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ইউরিনারি ইনফেকশনের অন্যতম লক্ষণ হলো প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কিডনিতে ব্যথা করা, কোমরে ব্যথা করা, তলপেটে ব্যথা করা ইত্যাদি। তবে কিছু নিয়ম যথাযথ ভাবে মেনে চললে ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ইউরিনারি ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়:

প্রস্রাব আটকে না রাখা: বাড়ির বাইরে অনেকেই মূত্রত্যাগ করতে চান না। এই দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা হতে পারে ইউরিনারি ইনফেকশনের কারণ। প্রস্রাব যদি মূত্রাশয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়, তাহলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতি ২০ মিনিটে মূত্রস্থিত ই.কলি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া মানে বেশি ব্যথা। তাই নিঃসন্দেহে সেরা উপায় হলো প্রচুর পানি পান করা এবং মূত্রত্যাগের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বের করে দেয়া।

প্রচুর পানি পান: যেকোনো রোগের প্রতিরোধক হলো প্রচুর পানি পান। ইউরিনারি ইনফেকশনের জন্য এটাই একক এবং সেরা উপায়। অনেকেই ভাবেন সারাক্ষণ তো জ্বালাপোড়া হচ্ছে না, শুধু টয়লেটে গেলেই যা সমস্যা! ফলে টয়লেটে যাওয়া কমিয়ে দেন। এর ফল হয় ভয়াবহ। গবেষণায় জানা গেছে, প্রচুর পানি পান শুধু মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়াই কমায় না, ইউরিনারি ইনফেকশনও দূর করে।

যৌন মিলনের আগে ও পরে: অনেকেরই দেখা যায় যৌনমিলনের পরে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। মিলনের আগে ও পরে মূত্রত্যাগ করা ইউরিনারি ইনফেকশন রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পুরুষের চেয়ে নারী ক্ষেত্রে এটা বেশি কার্যকর।

ভিটামিন সি: নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ কমিয়ে দিতে পারে ইউরিনারি ইনফেকশনের সম্ভাবনা। দিনে ১০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণে শরীরে যে অম্ল উত্‍পন্ন হয়, তাতে মূত্রে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস পায়।

গরম পানিতে গোসল: ইউরিনারি ইনফেকশনের ফলে সৃষ্ট ব্যথা উপশমে কুসুম গরম পানিতে গোসল অনেকের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

স্বাস্থ্যবিধি পালন: সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো বিকল্প নেই। ঢিলেঢালা পোশাক পরা, সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার, নিয়মিত গোসল করা, সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি খুবই জরুরি।

ইউরিন ইনফেকশনের বা প্রসাবে সংক্রমনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা নয়। চিকিৎসা নিন। খুব অল্প দিনের চিকিৎসাতেই আপনার প্রসাব সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ইউরিন ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাবার ঘরোয়া উপায়:

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। কারণ মেয়েদের ইউরিথ্রা বা মূত্রনালী পায়ুর খুব কাছাকাছি থাকে ফলে মলদার দিয়ে নির্গত ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রনালিতে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও মেয়েদের মুত্রনালী ছোট হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই মুত্রথলিতে ও কিডনিতে পৌঁছে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রনালির সংক্রমন বা ইউটিআই নির্ণয় করা যায়। কী জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তা দেখে ডাক্তার আপনাকে এন্টিবায়োটিক সেবন করতে দেবেন। এন্টিবায়োটিক-এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলাই বাহুল্য। যেমন- ডায়রিয়া, বমি , র‍্যাশ ও চুলকানি হওয়া ইত্যাদি। এই সংক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

১. প্রচুর পানি পান করুন: যাদের ইউটিআই আছে তাদের প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। বেশী পানি পান করলে প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের হয়ে যায়।

২. সোডা পান করুন: না কোন সফট ড্রিংক এর কথা বলছি না, বেকিং সোডার কথা বলছি। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন সকাল বেলা পান করুন প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া কমবে ।

৩. কিছু সেলারি বীজ চিবান: সেলারি বীজ মূত্র বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এক মুঠো সেলেরি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন অথবা এক কাপ গরম পানিতে কিছু সেলেরি বীজ দিয়ে ঢেকে দিন, ৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটা ইউটিআই প্রতিরোধ করে।

৪. শসা খান: শসাতে প্রচুর পানি আছে। প্রতিদিন কম পক্ষে একটি শসা স্লাইস করে খেতে পারেন।

৫. গরম সেঁক নিন: হট ওয়াটার ব্যাগ এ গরম পানি নিয়ে আপনার তলপেটের উপর রাখুন, এতে খুব দ্রুত প্রস্রাবের জ্বালা পোরা ও ব্যথা দূর হবে।

৬. আরামদায়ক পোশাক পড়ুন: স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। সূতির অন্তর্বাস পরলে ও ঢিলেঢালা পোশাক পরলে স্পর্শকাতর অঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button