খাদ্য ও পুষ্টি

বার্ধক্যে নিরামিষ

বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে নিরামিষ খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শরীরের তরতাজাভাব রক্ষা করা বা চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা যাই বলি না কেন, তার কৃতিত্ব কিন্তু বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলেস-এর। এইসব ভিটামিন ও মিনারেলস-এর উৎস হ’ল বিভিন্ন ফল ও শাক-সবজি। যে মৌসুমে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যাবে তা রান্না করতে হবে পুষ্টিগুণ রক্ষা করে। এসব খাবার থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেড, ফ্যাট তো পাওয়া যাবেই, বাড়তি পাওয়া যাবে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, যা জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করবে। ভিটামিন ‘এ’ ভিটামিন ‘ই’ এবং ভিটামিন ‘সি’ এই তিনটি ভিটামিনকে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস বলা হয়। ভিটামিন সি দেহকোষের বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি-এর অভাব হ’লে কোষীয় বিপাকীয় কার্যে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে টক্সিন রিলিজ হয়ে চুল এবং ত্বকের ক্ষতি করে। ‘ভিটামিন সি’-এর সাথে ‘ভিটামিন-ই’ মিলে সিবাসিয়াস গ্রন্থির  নিঃসরণের উপর প্রভাব ফেলে। এই দু’টো ভিটামিনের অভাব হ’লে সিবাস নিঃসরণ অল্প হয় এবং ত্বকে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং বয়সের ছাপ এসে যায়। এই ভিটামিন ত্বকের বলিরেখা উৎপন্নকারী ফ্রি র‌্যাডিকেলসকে প্রশমিত করে ত্বককে কোমল ও সজীব করে রাখে দীর্ঘদিন।

এছাড়া এই ভিটামিন রোদে পোড়া ত্বককে দ্রুত সজীবতা ফিরে আনতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ই চর্বিতে দ্রবণীয়। যে কোন উদ্ভিজ্জ তেলে এই ভিটামিন থাকে প্রচুর পরিমাণে। সাধারণত শাক-সবজি সিদ্ধ করে রান্না করলে এই ভিটামিনের কোন ক্ষতি হয় না। তবে ডুবো তেলে ভাজাভুজি করে খেলে এই ভিটামিন বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। হিমায়িত সবজিতেও ভিটামিন-ই ঠিক থাকে না।  এই ভিটামিন প্রাকৃতিকভাবে দেহে তৈরি হয় না। এগুলো অবশ্যই খাদ্য বা পরিপূরকের মাধ্যমে শরীরে সরবরাহ করতে হয়। একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের দৈনিক ভিটামিন-ই-এর চাহিদা ১৫-২০ আইইউ। চুলের ক্ষেত্রে প্রতিদিন মানুষের কিছু সংখ্যক চুল পড়ে এবং নতুন চুল গজায়। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ই’ চুলের কোষ বাড়াতে সাহায্য করে। নারী দেহে ইস্ট্রোমেন ও প্রজেস্টেরন নামে দু’টি মেয়েলী হরমোন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মেল হরমোন অ্যান্ড্রোজেন। ত্বক ও চুলের তারুণ্য বজায় রাখতে এই হরমোনগুলোর একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে নিঃসরণ প্রয়োজন। ইস্ট্রোজেন কমে গেলে ত্বকের টিস্যু তৈরী কমে যায়, ফলে ত্বকের টান টান ভাব ক্রমশ শিথিল হয়ে আসে। তবে আশার কথা হ’ল- চল্লিশোর্ধ বয়সে ইস্ট্রোজেনের এই অভাব পরোক্ষভাবে পূরণ করতে সাহায্য করে ফাইটোস্ট্রোজেন। ফাইটোস্ট্রোজেনের প্রধান উৎস হ’ল উদ্ভিজ্জ উৎস, সয়াবিন। এছাড়াও বরবটি, মটরশুুঁটি, শিম, কমলালেবু, কালো আঙ্গুর, বেদানা, আম, জাম, লেটুসপাতা, গাজর, বিট, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলে প্রচুর ফাইটোস্ট্রোজেন থাকে, যা রজ নিবৃত্তির পর নারী দেহের প্রায় সব শারীরিক সমস্যা দূর করতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, সয়াবিনসহ বিভিন্ন রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলে পাওয়া যায় ত্বক ও চুল সর্বোপরি সামগ্রিক তারুণ্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলস। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বেশি শাক-সবজি আর ফলমূল খাওয়ার ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন ধীরগতিতে চলে মানুষকে করে তোলে আরও সপ্রাণ, বোধশক্তিসম্পন্ন এবং আরো বেশি জীবনমুখী।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button