স্বাস্থ্য পরামর্শ

কিডনি সুস্থ রাখার ৭টি উপায়

কিডনি ফেইলুর বা রেনাল ফেইলুর শরীরের এক নীরব ঘাতক, প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই কেউ না কেউ এই ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে ইনশাআল্লাহ এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। যেমন-

১. কর্মঠ থাকা : নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সলাইকিং করা বা সাঁতার কাটার মত হাল্কা ব্যায়াম করে শরীরকে কর্মঠ ও সতেজ রাখা। কর্মঠ ও সতেজ শরীরে অন্যান্য যেকোন রোগ হবার মত কিডনি রোগ হবার ঝুকিও খুব কম থাকে।

২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শতকরা ৫০ জনই কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনি নষ্ট হবার ঝুকি আরো বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত রক্তের সুগার পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে তা স্বাভাবিক মাত্রায় আছে কি-না। শুধু তাই নয় অন্তত তিন মাস পরপর হ’লেও একবার কিডনি পরীক্ষা করিয়ে জেনে নেওয়া উচিত যে, সেটা সুস্থ আছে কি-না।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা : অনেকেরই ধারণা যে উচ্চ রক্তচাপ শুধু ব্রেইন স্ট্রোক (stroke) আর হার্ট এটাকের (heart attack) ঝুকি বাড়ায়। কিডনি ফেইলুর হবার প্রধান কারণ হ’ল অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ। তাই এ রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোন কারণে তা ১২৯/৮৯ মি,মি, এর বেশী হ’লে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত ঔষধ সেবন এবং তদসংক্রান্ত উপদেশ মেনে চললে সহজেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৪. পরিমিত আহার করা এবং ওযন নিয়ন্ত্রণে রাখা : অতিরিক্ত ওযন কিডনির জন্য ঝুকিপূর্ণ। তাই সুস্থ থাকতে হ’লে ওযন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কিডনি রোগ হবার ঝুকি অনেক কমে যায়। অন্য দিকে হোটেলের তেলমশলা যুক্ত খাবার, ফাষ্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে রোগ হবার ঝুকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। মানুষের দৈনিক মাত্র ১ চা চামচ লবণ প্রয়োজন, খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়াও কিডনি রোগ হবার ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।

৫. ধূমপান পরিহার করা : অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কিডনি ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা শতকরা ৫০ গুণ বেশী। শুধু তাই নয় ধূমপানের কারণে কিডনিতে রক্তপ্রবাহ কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হরাস পেতে শুরু করে। এভাবে ধূমপায়ী একসময় কিডনি ফেইলুর রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।

৬. অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন : আমাদের মাঝে অনেকেরই অভ্যাস আছে প্রয়োজনে/অপ্রয়োজনে দোকান থেকে ঔষুধ কিনে খাওয়া। এদের মধ্যে ব্যথার ঔষধ (NSAID) রয়েছে শীর্ষ তালিকায়। স্মর্তব্য যে, প্রায় সব ঔষধই কিডনির জন্য কমবেশী ক্ষতিকর। আর এর মধ্যে ব্যথার ঔষুধ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর। নিয়ম না জেনে অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন মনের অজান্তেই কিডনিকে ধ্বংস করে। তাই যে কোন ঔষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

৭. নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো : আমাদের মাঝে কেউ কেউ আছেন যাদের কিডনি রোগ হবার ঝুকি অনেক বেশী, তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। কারো যদি ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, ওযন বেশী থাকে (স্থুলতা/Obesity), পরিবারের কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকেন, তাহ’লে ধরে নিতে হবে তার কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার ঝুকি অনেক বেশী। তাই এসব কারণ থাকলে অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে।

কিডনি ফেইলুর হয়ে গেলে ভালো হবার কোন সুযোগ নেই, ডায়ালাইসিস কিংবা প্রতিস্থাপন (Renal Transplant) করে শুধু কিছুদিন সুস্থ থাকা সম্ভব মাত্র। আল্লাহই প্রকৃত হেফাযতকারী।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Back to top button