রাজশাহী বিভাগ

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন  মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। বরিশালের রহমতগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহন করা বাংলার এই বীর সন্তান ১৯৭১ সালে মহানন্দা নদীর কাছে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করাকালীন প্রতিপক্ষ শত্রুর বুলেটের আঘাতে শহীদ হন। ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটক জাহাঙ্গীর গেইটের নামকরন করা হয়েছে মহান এই বীরশ্রেষ্ঠের সম্মানে।

১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ ও পাশবিক অত্যাচারের ক্রান্তিলগ্নে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পার্বত্য সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে শিয়ালকোট সীমান্ত থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। সেই সময় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্দেশে রাজশাহী জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত আক্রমনে প্রতিপক্ষের হানাদার বাহিনীর দুর্ভেদ্য ঘাঁটিগুলোর একের পর এক পতন ঘটতে থাকে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তাঁর নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আক্রমন করে। ১৪ ডিসেম্বর সকালে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মহানন্দা নদী অতিক্রম করে শত্রুসৈন্যদের দুর্ভেদ্য ঘাটি নিশ্চিহ্ন করার উদ্দ্যেশে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। অসীম বীরত্বের সাথে একের পর এক শত্রু ঘাটি নিশ্চিহ্ন করার সময় হঠাৎ পাকিস্থানি বাহিনীর একটি স্নাইপার বুলেট এসে তাঁর দেহে আঘাত হানে। নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নিথর দেহ। ১৫ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া এই বীর যোদ্ধার লাশ তাঁর সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনে আনে ও তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে সম্মানের সাথে সোনা মসজিদ চত্বরে সমাহিত করা হয়। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি স্থলে যাওয়ার জন্য সড়ক বা রেল পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে হবে। ঢাকা কল্যানপুর, আব্দুল্লাহপুর, মহাখালী ও গাবতলী থেকে হানিফ, একতা ট্রান্সপোর্ট, গ্রামীন ট্র্যাভেলস, ন্যাশনাল ট্র্যাভেলস, দেশ ট্র্যাভেলস, চাপাই ট্র্যাভেলস, শান্তী পরিবহন এর বাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাওয়া যায়। বাসের মানভেদে ভাড়া লাগবে নন এসি ৬০০-৭০০ টাকা ও এসি ১০০০-১৩০০ টাকা। চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌঁছে সিএনজি বা অটো রিকশায় ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের সমাধি স্থলে যেতে পারবেন। রেলপথে আসতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর অথবা বিমান বন্দর স্টেশান থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে আসতে পারেন। শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহের ৬ দিন এই ট্রেন যাত্রা করে ট্রেনের আসন ভেদে ভাড়া লাগবে ৪২৫-৯৭৫ টাকা।

কোথায় থাকবেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাত্রিযাপনের জন্য শহরেই আছে থ্রি স্টার মানের স্কাই ভিউ ইন (+88 01955 66 88 99)। এছাড়া কম খরচে থাকার জন্যে হোটেল রোজ, লাল বোর্ডিং, হোটেল আল নাহিদ, হোটেল স্বপ্ন পুরী, হোটেল রংধনুর মতো আবাসিক হোটেলগুলো উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

ছোট সোনা মসজিদের আশেপাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে চাপাইনবাবগঞ্জে খাবারের জন্য বেশ কিছু বিভিন্ন মানের হোটেল/রেস্টুরেন্ট পাবেন। তবে শিবগঞ্জের আদি চমচম খেতে ভুলবেন করবেন না।

লক্ষ্যনীয় কিছু বিষয়

  • সমাধিস্থলে যাওয়ার সময় শালীন পোশাক পরুন।
  • সমাধিস্থলে উঠার আগে জুতা বা স্যান্ডেল খুলে রাখুন।
  • সমাধিস্থলে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানান।
  • সমাধিস্থলে কোনও ধরনের ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Back to top button