ফসলের পোকামাকড়

নারিকেলের মাকড় দমনে করণীয়

নারকেল শুকিয়ে ছোট আকার হওয়ার জন্য দায়ী এক প্রকার ক্ষুদ্র মাকড়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নারকেল গাছ সূর্যের আলো ও পানির বিক্রিয়ায় পাতায় যে খাদ্য তৈরি করে তা দেহের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করে থাকে। গাছ বর্ধিষ্ণু ফল-এ অপেক্ষাকৃত বেশি খাদ্য সরবরাহ করে এবং বোটা দিয়েই এই খাদ্য ফলে সঞ্চালিত হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির এই মাকড় দলবদ্ধ ভাবে কচি ফলের বোটার কাছে বৃতির নিচে বসে পুষ্টি চুষে নেয়। এতে করে ফলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রস চোষার সময় কচি নারকেলের খোলার পরিবহণ কলায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। একবীজপত্রী উদ্ভিদ হওয়ায় নারকেলের কান্ডে বা ফলে কোন ক্ষত সৃষ্টি হ’লে তা আর পূরণ হয় না। ফলের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব ক্ষতের আকারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলের বয়স ৭-৮ মাস হ’লে পাতায় তৈরি খাদ্য সরবরাহ কমতে থাকে। এসময় মাকড় অন্য কোন নতুন কাদিতে চলে যায়। গাছে ফল না থাকলে এরা কচি পাতায় চলে যায়। নারকেলের এ মাকড় খুব ধীরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। তারা উড়তে পারে না; কেবল বাতাস, কীট-পতঙ্গ ও পাখির মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়। গাছের ফল থেকে পুষ্টিকর খাবার খায় বলে এরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এদের জীবনকাল মাত্র ৭দিন। ডিম থেকে বাচ্চা হ’তে লাগে ৩দিন। এ মাকড় দমন করতে নিয়ম ও পদ্ধতি মোতাবেক মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হয়। মাকড় প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। নির্বিচারে কীটনাশক প্রয়োগ, ইটের ভাটার ধোঁয়া প্রভৃতি কারণে মাকড়ের শত্রু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরা খাবার খেতে কচি ফল ও ফুলে অবস্থান নেয়। তাই ফুল ও কচি ফল টোপ হিসাবে ব্যবহার করে এদের ধ্বংস করা যায়। শীতের পর নারকেল গাছে মাসে ২-৩টি ফুলের ছড়া বের হয়। আক্রান্ত গাছে শীতের শেষে ফুলসহ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সকল ফল কেটে ফেলতে হবে। তারপর গাছে উমাইট ১.৫ মি.লি. বা ভার্টিমেক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে কচি পাতাসহ গাছের মাথায় স্প্রে করতে হবে। যখন গাছে নতুন ফুল দেখা দেবে তখন থেকে প্রতি একমাস অন্তর ৪-৫ বার মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে। যাতে অন্য গাছ থেকে পুনরায় আক্রমণ না করতে পারে, তাই এলাকা ভিত্তিক মাকড় দমন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়। গাছের গোড়ায় আধা কেজি করে নিমের খোল প্রয়োগ করলে গাছের রোগ ও পোকা মাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউশন ট্রাইকো কম্পোস্ট নামে এক ধরনের জীবাণুনাশক সার উদ্ভাবন করেছে, যা গাছের রোগ-বালাই এর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Back to top button