মসলা ফসল

হলুদ চাষ

হলুদ একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় হলুদের ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশী। মসলা হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও অনেক ধরনের প্রসাধনী কাজে ও রং শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৪৫ হাজার ৫ শত ৫০ একর জমিতে ৭ লাখ ৭ হাযার ৩০০ মেট্রিক টন হলুদ উৎপন্ন হয়। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলন কম হওয়ার মূল কারণ উচ্চ ফলনশীল জাত এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতির অভাব। উচ্চফলনশীল জাত এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হ’লে হলুদের ফলন দ্বিগুণেরও বেশী করা সম্ভব। বাংলাদেশে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, নীলফামারী ও পার্বত্য যেলা সমূহে হলুদের ব্যাপক চাষাবাদ হয়।

গুণাগুণ ও ব্যবহার : হলুদে আমিষ, চর্বি, প্রচুর ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন থাকে। হলুদ পাকস্থলীর গ্যাস নিবারণ করে, মুত্রনালীর রোগ নিবারণ করে থাকে এবং ক্ষত শুকাতে ও ব্যথা নিবারণে ব্যবহৃত হয়। মসলা হিসাবে বিভিন্ন প্রকার রান্নার কাজে হলুদ ব্যবহার করা হয়। রূপ চর্চায়ও হলুদের ব্যবহার রয়েছে।

উপযুক্ত জমি ও মাটি : সব ধরনের মাটিতে চাষ করা গেলেও উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদের জন্য ভালো। যে কোন ফলের বাগানের শুরুতে সাথী ফসল হিসাবে হলুদ চাষ লাভজনক। আবার সম্পূর্ণ ছায়াযুক্ত ফলের বাগানে চাষ করলে ফলন খুবই অল্প হবে, তবে অর্ধেক ছায়া অর্ধেক আলো এমন বড় ফলের বাগানে চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

জাত পরিচিতি : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত হলুদের তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত হচ্ছে (ক) বারি হলুদ-১ (ডিমলা), (খ) বারি হলুদ-২ (সিন্দুরী) ও (গ) বারি হলুদ-৩।

বীজ লাগানো : চৈত্র মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়। সাধারণতঃ ১৫-২০ গ্রাম ওযনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগাতে হয়। ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে সারি করে ২৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ৫-৭ সেন্টিমিটার গভীরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি হেক্টরে ২৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়। কন্দ লাগানোর পর ভেলী করে দিতে হয়।

সার ব্যবস্থাপনা : জমির উর্বরতার উপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। সাধারণতঃ প্রতি হেক্টরে সারের পরিমাণ হ’ল গোবর ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি ও জিংক সালফেট ২-৩ কেজি। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ৮০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০-৬০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি ইউরিয়া ভেলী হালকাভাবে কুপিয়ে প্রয়োগ করে আবার ভেলী করে দিতে হয়। ১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং আরও ৫০-৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির উপরি সার হিসাবে প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য মাটি ভেলীতে দিতে হবে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা : মাটিতে রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। বৃষ্টির পানি যাতে গাছের গোড়ায় না জমে সেজন্য নালা করে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে। তবে সার উপরি প্রয়োগের সময় আগাছা পরিষ্কার করে প্রয়োগ করা ভাল।

Leave a Reply

Back to top button