রোগ ও প্রতিকার

ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা

শোল্ডার জয়েন্ট বা কাঁধের অস্থিসন্ধির একটি অসুখ ফ্রোজেন শোল্ডার। এই রোগটির প্রধান লক্ষণ হ’ল ব্যথা। সাধারণতঃ ব্যথা ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। প্রথমে নিয়মিত কাঁধের চারপাশে অল্পস্বল্প ব্যথা হয়। পরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং ব্যথা ঘাড়ে, পিঠে, কনুই-এর দিকে ছড়িয়ে পড়ে। নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে থাকে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হ’ল হাতের আড়ষ্টতা। রোগীর অলক্ষ্যে, হাতের সাধারণ নড়াচড়ার পরিমাণ কমতে থাকে এবং কাঁধের কব্জা ধীরে ধীরে আটকে যায়। চুল আঁচড়াতে, পিঠ চুলকাতে বা পেছনের পকেটে হাত ঢোকাতে সমস্যা হয়। মাথার উপরে হাত তুলে কোন কাজ করা যায় না (যেমন বাস-ট্রেনের হাতল ধরা, দড়িতে জামাকাপড় মেলা, কিছু ছোঁড়া ইত্যাদি)। পরের দিকে হাতের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে, হাতের শক্তিও কমে যায়।

কারা রয়েছেন ঝুঁকিতে?

(১) যাঁরা আগে কখনো কাঁধে চোট পেয়েছিলেন কিন্তু সঠিক চিকিৎসা করানো হয়নি, তাঁদের পরবর্তী সময়ে ফ্রোজেন শোল্ডার হ’তে পারে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে শোল্ডারের মুভমেন্ট কমে গেলে একপর্যায়ে এটা হ’তে পারে। যেমন- হাত ভেঙে যাওয়া, স্ট্রোক ও অপারেশন জনিত কারণে দীর্ঘদিন শোল্ডারের মুভমেন্ট কমে যাওয়া ইত্যাদি। (২) যারা খুব বেশী ভারী কাজ করেন অথবা রান্নাঘরের কাজ বেশী করেন তাঁদেরও হ’তে পারে এ রোগ। (৩) বিভিন্ন রোগের কারণে হ’তে পারে যেমন- ডায়াবেটিস, থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, হার্টের রোগ, যক্ষ্মা ও পারকিসন্স রোগ। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন অস্টিওয়ারথ্রাইটিস বা রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিসে ভুগে থাকেন তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হ’তে পারে। (৪) বয়স ৪০ বা তার ঊর্ধ্বে তারা এই সমস্যার জন্য ঝুঁকিতে থাকেন। এর আগেও হ’তে পারে।

চিকিৎসা নিন :

ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসা না করালে কাঁধের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই এ রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। ব্যথা ও কাঁধের জড়তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।

এ রোগের চিকিৎসায় কাঁধে গরম সেক দিতে হবে। খেতে হ’তে পারে ব্যথার ওষুধ। ব্যথার ওষুধ খাওয়া  উচিত  ভরা  পেটে  আর খাবার খাওয়ার আগে গ্যাসের ওষুধও খেয়ে নিন চিকিৎসকের পরামর্শমতো। অন্য কারও সাহায্য নিয়ে কাঁধের ব্যায়াম করুন। ফিজিওথেরাপিও নিতে হ’তে পারে। ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পরও করাতে হবে বিশেষ ধরনের ব্যায়াম শোল্ডার মোবিলাইজিং এক্সারসাইজ।

এ রোগ সারতে সময় লাগে প্রায় ১৮ মাস। তবে এ চিকিৎসায় কাজ না হ’লে চিকিৎসকের পরামর্শমতো কাঁধে ইনজেকশন দিতে হ’তে পারে। এমনকি লাগতে পারে অস্ত্রোপচারও।

কাঁধে চোট পেলে সেটির চিকিৎসা করাতে হবে ঠিকঠাক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কেউ কেউ মনে করেন, দীর্ঘদিন কাজ না করলে একসময় কাঁধের অস্থিসন্ধির জড়তার কারণে ফ্রোজেন শোল্ডার হ’তে পারে। এমন ধারণা ঠিক নয়। বরং কাঁধের অস্থিসন্ধিতে প্রচন্ড চাপ পড়লে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কখনোই খুব বেশী ভারী জিনিস তোলা ঠিক নয়। কাঁধ প্রচন্ড মোচড় খায়, এমনভাবে কাঁধ নাড়িয়ে কোন কাজ করা উচিত নয়।

ব্যায়ামবিধি :

ঘরেই করতে পারবেন কাঁধের ব্যায়ামগুলো। এসব ব্যায়ামের মধ্যে একটি হ’ল পেন্ডুলাম এক্সারসাইজ। এটি করার নিয়ম হ’ল সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাত যতটা ঘোরাতে পারা যায়, সামনে-পেছনে করে ততটাই ঘোরাতে চেষ্টা করতে হবে। ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘোরে, প্রথমে সেদিকে ১০ বার হাত ঘোরাতে হবে। এরপর ঠিক এর বিপরীত দিকে হাত ঘোরাতে হবে আরও ১০ বার। এভাবে দিনে দুই বার করে ব্যায়ামটি করতে হবে।

দু’সপ্তাহ পর এটির পরিবর্তে করতে হবে ওয়েট বিয়ারিং এক্সারসাইজ। হাতে কিছুটা ওযন নিয়ে হাত ঘোরানোর এই ব্যায়ামটি শুরু করতে হবে। পেন্ডুলাম এক্সারসাইজের নিয়মেই করতে হবে এই ব্যায়াম। ঘড়ির কাঁটার দিকে ১০ বার এবং তার বিপরীত দিকে ১০ বার করে হাত ঘুরিয়ে করতে হবে এই ব্যায়ামটিও। দিনে দুই বার করেই করুন এই ব্যায়াম।

পেন্ডুলাম এক্সারসাইজের পাশাপাশি করা যাবে ওয়াল ক্লাইম্বিং এক্সারসাইজ। এই ব্যায়াম করতে রোগী যতটা হাত ওঠাতে পারে, একটি দেয়াল ধরে দেয়ালটি বরাবর ঠিক ততটা উচ্চতায় হাত উঠাতে হবে তাঁকে। ধীরে ধীরে অধিক উচ্চতায় হাত ওঠাতে চেষ্টা করতে হবে। সব ব্যায়ামকেই একসঙ্গে শোল্ডার মোবিলাইজিং ব্যায়াম বলা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Back to top button