বাংলাদেশ ভ্রমণসিলেট বিভাগ

জাফলং

জাফলং (Jaflong) প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত। সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়, যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে।

জাফলং যাওয়ার উপায়

জাফলং যেতে আপনাকে আসতে হবে চায়ের দেশ সিলেটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানান উপায়ে সিলেট আসা যায়। ঢাকা হতে বাস, ট্রেন ও আকাশপথে সিলেট যাওয়া যায়। চলুন জেনে নিন বিস্তারিত।

ঢাকা থেকে সিলেট

ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ এদের মধ্যে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, ইউনিক, এস আলম, শ্যামলি, এনা ও লন্ডন এক্সপ্রেস বাস অন্যতম। এসি বাসের জনপ্রতি আসন ভাড়া বাসভেদে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে এবং নন-এসি বাস ভাড়া ৫৭০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব প্রায় ২৪০ কিলোমিটার এবং বাসে করে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন। শ্রেণী ভেদে ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৩২০ থেকে ১০৯৯ টাকা। ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা।

আর ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে সিলেট যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমানে সিলেট যেতে ক্লাস অনুযায়ী টিকেট মূল্য ৩,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

চট্রগ্রাম থেকে সিলেট

চট্রগ্রাম থেকে গ্রীনলাইন, এনা, সৌদিয়া ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ অন্যান্য পরিবহনে বেশকিছু বাস সিলেট যায়। এসি বাস ভাড়া ১২০০-১৪০০ টাকা ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। শ্রেণী অনুযায়ী ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৩৭৫ থেকে ১৩৩৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে বিমানে ঢাকা হয়ে সিলেট যাবার সুযোগ রয়েছে।

সিলেট থেকে জাফলং

সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। সিলেট থেকে সরাসরি জাফলং যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা। বাস, সিএনজি, লেগুনা কিংবা মাইক্রোবাসে জাফলং যেতে পারবেন। জাফলংগামী বাস ছাড়ে কদমতলী থেকে। লোকাল বাস ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা এবং গেইটলক বিরতীহীন বাস ভাড়া ১০০ টাকা। আপনার সুবিধামত চাইলে সিলেট শহরের সোবহানীঘাট থেকেও বাসে উঠতে পারবেন। বাস ছাড়াও জাফলং যাওয়ার লোকাল লেগুনা সার্ভিস রয়েছে।

রিজার্ভ গাড়িতে যেতে চাইলে সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাস পাবেন বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে থেকে। এছাড়াও সিলেটের প্রায় সব জায়গা থেকেই রিজার্ভ যাওয়ার গাড়ি পাবেন। সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৫ জন, লেগুনাতে ১০ জন এবং মাইক্রোবাসের আসন অনুযায়ী বসে যেতে পারবেন।

জাফলং যাওয়া-আসা সহ সারাদিনের জন্যে সিএনজি ভাড়া লাগবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, লেগুনা ২০০০-২৫০০ টাকা এবং মাইক্রোবাস রিজার্ভ নিলে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। কয়েকজন একসাথে ঘুরতে গেলে গাড়ি রিজার্ভ করে নেওয়া ভাল হবে এবং যাওয়ার পথে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান সহজে ঘুরে দেখতে পারবেন। গাড়ি ঠিক করার আগে কি কি দেখতে চান তা জানিয়ে দরদাম করে নিন। 

আর পিকনিক কিংবা পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসলে বাস বা প্রাইভেট কার নিয়ে সরাসরি জাফলং পর্যন্ত যেতে পারবেন। বর্তমানে জাফলং যাবার রোড বেশ ভালো। মামার বাজার না গিয়ে গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্ট যাওয়ার রাস্তাটি অধিক জনপ্রিয়।

কোথায় থাকবেন

সাধারণত জাফলং ভ্রমণকারী পর্যটকরা রাত্রিযাপনের জন্য সিলেট শহরেই ফিরে আসেন। তাছাড়া সিলেট থেকে অন্যান্য ভ্রমণস্থানে যাওয়া সুবিধাজনক। সিলেটের বেশিরভাগ হোটেলগুলো শাহজালাল মাজারের আশেপাশকে ঘিরে অবস্থিত। দরগা গেট হতে আম্বরখানা, তালতলা, লামাবাজার, কদমতলী পর্যন্ত বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। কম খরচে থাকতে চাইলে দরগা গেট এলাকায় ৫০০-১০০০ টাকা মানের অনেক হোটেল পাবেন।

ভালমানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

আর জফলং যদি থাকতেই হয় তাহলে মামার বাজার এলাকায় জাফলং ইন হোটেল ও হোটেল প্যারিস সহ আরো কিছু রেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ভিউ সহ জৈন্তিয়া হিল রিসোর্টে যোগাযোগ করতে পারেন। আর সরকারী রেস্ট হাউজে থাকতে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়।

কি খাবেন – কোথায় খাবেন

জাফলংয়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্টের মধ্যে জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট, সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্ট এবং জাফলং পর্যটক রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। সিলেট শহরে খেতে চাইলে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত খাবার খেতে পারবেন। এই রেস্টুরেন্টগুলো অনেক রকম ভর্তা, খিচুড়ি এবং মাংসের পদের জন্য সবার কাছে সমাদৃত। সকালের নাস্তা করতে পারবেন জনপ্রতি ৫০-১০০ টাকায় এবং দুপুর বা রাতের খাবার খেতে খরচ হবে ১৫০-৩০০ টাকা।

জাফলং এর কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান

  • লালাখাল
  • তামাবিল
  • জৈন্তাপুর
  • সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা / মায়াবী ঝর্ণা
  • সংগ্রামপুঞ্জি চা বাগান
  • ডিবির হাওর – শাপলা বিল

জাফলং ভ্রমণ টিপস

  • গ্রুপ করে গেলে ভাল খরচ কম হবে।
  • কিছু কিনতে বা খেতে চাইলে দরদাম করে নিন।
  • যেহেতু জাফলং সীমান্তবর্তী এলাকা, তাই সীমান্ত এলাকার নির্দেশনা মেনে চলুন।
  • গাড়ি ঠিক করার সময় দরদাম করুন।
  • পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন, পাথর উত্তোলনের ফলে অনেক যায়গা বেশ গভীর।
  • স্থানীয়দের সাথে সুন্দর ব্যবহার করুন।
  • এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন যা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর।

Leave a Reply

Back to top button