ফল

কলা চাষ

পুষ্টিকর ফল হিসাবে বিশ্বব্যাপী কলার চাহিদা ব্যাপক। একবার কলার চারা রোপণ করলে ২/৩ মৌসুম চলে যায়। কলার গাছ বড় হওয়ার কারণে গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বেড়া দিতে হয় না। বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত না হ’লে ১ একর জমি থেকে ধান পাওয়া সম্ভব (ইরি-আমন মিলিয়ে) ৮০/৯০ মণ। এর আনুমানিক মূল্য ৪৫/৫০ হাযার টাকা। এতে খরচ হবে (সার, লেবার, চাষ ও পরিষ্কারসহ) প্রায় ১৬ হাযার টাকা। পক্ষান্তরে এক একর জমির কলা বিক্রি হবে ১ লাখ ৮০ হাযার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এতে সর্বোচ্চ খরচ হবে ৫০ হাযার টাকা। এছাড়া কলার মোচা উৎকৃষ্টমানের তরকারি হিসাবে ব্যবহ্নত হয়।

জাত বাছাই : বাংলাদেশে অমৃত সাগর, মেহের সাগর, সবরি, অনুপম, চাম্পা, কবরী, নেপালি, মোহনভোগ, মানিকসহ বিভিন্ন জাতের কলাচাষ হয়ে থাকে।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ : ৭/৮ বার চাষ দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরি করে নিতে হয়। অতঃপর জৈবসার (যেমন গোবর, কচুরিপানা ইত্যাদি) হেক্টর প্রতি ১২ টন হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। অতঃপর ২ু২ মিটার দূরত্বে গর্ত খনন করতে হবে। প্রতিটি গর্তে ৬ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে নির্ধারিত জাতের সতেজ ও সোর্ড শাকার (তরবারি চারা) চারা রোপণ করতে হবে। এভাবে একরপ্রতি সাধারণত ১ হাযার থেকে ১ হাযার ১শ’ চারা রোপণ করা যায়। পরবর্তী সময়ে ২ কিস্তিতে গাছ প্রতি ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম এমপি ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।

রোপণের সময় : কলার চারা বছরে তিন মৌসুমে রোপণ করা যায়। প্রথম মৌসুম মধ্য জানুয়ারী থেকে মধ্য মার্চ। দ্বিতীয় মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে। তৃতীয় মৌসুম মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছ রোপণের প্রথম অবস্থায় ৫ মাস পর্যন্ত বাগান আগাছামুক্ত রাখা যরূরী। কলাবাগানে জলাবদ্ধতা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সাথী ফসল : চারা রোপণের প্রথম ৪/৫ মাস বলতে গেলে জমি ফাঁকাই থাকে। যদি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয়, তবে কলাবাগানের মধ্যে অন্তঃফসল হিসাবে মিষ্টি কুমড়া, শসা ও বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করা যায়।

কলার রোগ ও তা প্রতিরোধ : সাধারণত কলাতে বিটল পোকা, পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস ও সিগাটোকা রোগ আক্রমণ করে থাকে। বিটল পোকায় আক্রান্ত হ’লে কলা সাধারণত কালো কালো দাগযুক্ত হয়। প্রতিরোধের জন্য ম্যালথিয়ন অথবা লিবাসিস ৫০ ইসিসহ সেভিন ৮৫ ডব্লিউপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। পানামা রোগে সাধারণত কলাগাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে গাছ লম্বালম্বি ফেটে যায়। এ রোগের প্রতিরোধে গাছ উপড়ে ফেলা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাঞ্চিটর ভাইরাসে আক্রান্ত হ’লে কলার পাতা আকারে ছোট ও অপ্রশস্ত হয়। এটি দমনের জন্য রগর বা সুমিথিয়ন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সিগাটোগায় আক্রান্ত হ’লে পাতায় ছোট ছোট হলুদ দাগ দেখা যায়। এক সময় এ দাগগুলো বড় ও বাদামি রং ধারণ করে। এ অবস্থা দেখা দিলে আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং মিলিটিলট-২৫০ ইসি অথবা ব্যাভিস্টিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button