আট কবর, চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা জেলার জগন্নাথপুরে অবস্থিত আট কবর (Atkobor/Atkabar) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্মৃতি বিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। চুয়াডাঙ্গা থেকে আট কবর সমাধিস্থলের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট কমান্ডার হাফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার জয়পুর শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। সকালবেলা পাকিস্তান মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে খবর পাঠায় রাজাকারেরা নাটুদা, জগন্নাথপুর এবং এর আশেপাশের জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। এমন খবর শুনে ৫ আগস্ট কমান্ডার হাসানের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান গ্রামে ছুটে যান। সেখানে আগে থেকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকা নাটুদা ক্যাম্পের পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি সৈন্যদের সম্মুখ যুদ্ধে আট জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন। এরপর পাক বাহিনীর নির্দেশের রাজাকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের মৃতদেহগুলো দুইটি গর্তে কবর দিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের এই সমাধিস্থল স্থানীয় মানুষের কাছে আট কবর হিসেবে পরিচিত।
১৯৯৮ সালে ০.৬৬ একর জমিতে আট কবর কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়। আট কবর কমপ্লেক্স মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি ছাড়াও আরো আছে গ্রন্থাগার, মুক্তমঞ্চ ও একটি দোতলা ভবন। দোতলা ভবনের দেয়াল জুড়ে প্রায় ২০০ টি আলোকচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে যেকেউ এখানে থাকার আবাসিক সুবিধাও নিতে পারবেন।
৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন-
- খালেদ সাইফুদ্দিন তারেক – পোড়াদহ, কুষ্টিয়া
- হাসান জামান – গোকুলখালি, চুয়াডাঙ্গা
- আলাউল ইসলাম খোকন – চুয়াডাঙ্গা শহর
- রওশন আলম – আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা
- রবিউল ইসলাম – মোমিনপুর, চুয়াডাঙ্গা
- আবুল কাশেম – চুয়াডাঙ্গা শহর
- আফাজ উদ্দিন চন্দ্রবাস – দামুরহুদা
- কিয়ামুদ্দিন – আলমডাঙ্গা
কিভাবে যাবেন
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আট কবর যেতে হলে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা শহরে আসতে হবে। চুয়াডাঙ্গা শহর হতে সরারসরি বাস বা লেগুনায় চড়ে আট কবর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা হতে চুয়াডাঙ্গার দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা জেলায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা থেকে বাসে চুয়াডাঙ্গা
গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হতে মানভেদে বাসে করে চুয়াডাঙ্গা জেলায় যেতে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা ভাড়া লাগে। উল্লেখযোগ্য বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে – পর্যটক পরিবহণ (01719-813004), স্কাই লাইন, পাবনা এক্সপ্রেস (02-9008581) এবং চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেস।
এছাড়া বাসে চড়ে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা যাবার পথে এক পলকে সাভার স্মৃতিসৌধ ও ক্যান্টনমেন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর এবং মাগুড়া জেলার বেশকিছু দর্শণীয় স্থান দেখতে পারবেন।
ঢাকা থেকে ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা
কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে চিত্রা, তূর্ণা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন যমুনা সেতু পাড় হয়ে চুয়াডাঙ্গার পথে যাত্রা করে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: 01711-691612, 02-9331822। শ্রেণীভেদে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত জনপ্রতি ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৩৯০ থেকে ১৩৯০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এসব হোটেলে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় রাতে থাকতে পারবেন। উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে – হোটেল অবকাশ (0761-62288), হোটেল আল মেরাজ (0761-62383), অন্তুরাজ আবাসিক হোটেল (0761-62702), হোটেল প্রিন্স (0761-62378)।
আট কবর ছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় যেসব দর্শণীয় স্থান রয়েছে:
- ঘোলদাড়ী জামে মসজিদ
- আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন
- তিয়রবিলা বাদশাহী মসজিদ
- দর্শনা কেরু এন্ড কোং লিঃ
- দর্শনা রেল ষ্টেশন
- দর্শনা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকপোষ্ট
- দর্শনা শুল্ক ষ্টেশন
- হযরত খাজা মালিক উল গাউস (রঃ)এর মাজার
- মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
- চারুলিয়া
- দত্তনগর কৃষি খামার