ফল

শরিফা ফল চাষ পদ্ধতি

আম কাঁঠালের মৌসুম শেষ হ’লেই বাযারে দেখা যায় শরিফা বা আতা ফল। অপ্রধান ও স্বল্পপ্রচলিত এ ফলটি বেশীরভাগ বসতবাড়ির আঙিনায় আবাদ হয়। তবে বর্তমানে ফলের চাহিদা মেটাতে বাগান আকারে শরিফার চাষ শুরু হয়েছে।

পর্তুগিজ ভাষায় ফলটিকে ‘আতা’ বলে। পর্তুগিজরা এ ফলটিকে আমাদের দেশে নিয়ে আসেন। এ ফলটির গাছের উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার। ফেব্রুয়ারী/মার্চ মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। এলাকা ভেদে ফল গোলাকার, ডিম্বাকার ও হৃদপিন্ডাকার হয়। সাধারণত একটি ফলের ওযন ১০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। খাবারযোগ্য শাঁস বা পাল্পের পরিমাণ ফলের মোট ওযনের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। শাঁসের রঙ সাদা ও ক্রিম ধরনের। শাঁস মিষ্টি ও সুস্বাদু। এতে চিনির মত মিহি দানা থাকে। ফলের টিএসএস ১৮ থেকে ২৪% হয়ে থাকে। ফলের আকার ও প্রকার ভেদে কোষের সংখ্যা ১৯ থেকে ৫৪টি হয়। বীজ কালো, শক্ত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত এর অংকুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে।

মাটি ও জলবায়ু :

পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু জমিতে, বসতবাড়ির খোলা জায়গায় এবং অল্প ছায়াযুক্ত স্থানেও শরিফা গাছ লাগানো যায়। তবে বেলে দোঅাঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়। অম্ল স্বাদযুক্ত পাহাড়ী মাটিতেও এ গাছ ভাল হয়। শরিফা গাছ শুষ্ক ও গরম পরিবেশে ভাল হয়।

চারা তৈরি :

বীজ থেকে সাধারণত শরিফার চারা তৈরি করা হয়। বীজের গাছও দুই-তিন বছর বয়স থেকে ফল দেয়া শুরু করে। পুষ্ট ও নিরোগ বীজ থেকে চারা উৎপাদন করতে হয়। বীজ থেকে চারা অংকুরিত হ’তে দুই-তিন মাস সময় লাগে। বীজের আবরণ বেশ শক্ত। তাই পানিতে ভিজিয়ে বপন করলে তাড়াতাড়ি গজায়। বীজতলায় এবং পলিথিনের ব্যাগে চারা উৎপাদন করা যায়। ৪ থেকে ৫ মাস বয়সী সুস্থ চারা বা কলম মূল জমিতে লাগাতে হয়। জুন-জুলাই মাস চারা রোপণের জন্য উত্তম। ইদানীং গ্রাফটিং করেও চারা তৈরী করা হচ্ছে। ৬ থেকে ১২ মাস বয়সী চারার উপর ভিনিয়ার এবং ক্লেফট্ গ্রাফটিং করা হয়। ফেব্রুয়ারী মাস থেকে জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত গ্রাফটিং করার উপযুক্ত সময়।

উৎপাদন কৌশল :

জমি পরিষ্কার করে চাষ ও মই দিয়ে সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪ মিটার বজায় রেখে ৬০×৬০×৬০ সে.মি. গর্ত করে প্রতি গর্তে ২০ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১৫ থেকে ২০ দিন রাখতে হবে। এরপর গর্তের ঠিক মাঝখানে খাড়াভাবে চারা রোপণ করতে হবে। রোপণের পর পরই গর্তে পানি দিতে হবে। প্রতি বছর ১ থেকে ২ বছর বয়সী গাছে ফেব্রুয়ারী ও অক্টোবর মাসে দুই কিস্তিতে মোট ১৫ থেকে ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার পরপর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিবছর সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। ফল ধরার আগ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর গাছের দ্রুত বাড়ার জন্য ইউরিয়া এবং এমপি সারের ব্যবহৃত মোট পরিমাণকে ভাগ করে প্রতি ২ মাস পরপর ব্যবহার করা যেতে পারে। ৮ থেকে ১০ বছরের একটি ফলন্ত গাছে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী, মে এবং অক্টোবর মাসে ১৫০ থেকে ১৭৫ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ থেকে ১৭৫ গ্রাম টিএসপি ও ১২৫ থেকে ১৫০ গ্রাম করে এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ-বালাই :

পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন দেখা না গেলেও মিলিবাগ ফল এর উপর আক্রমণ করে। গাছ ছোট হওয়াতে সহজেই হাত দিয়ে এ পোকা দমন করা যায়। তাছাড়া এক ধরনের পিঁপড়া (গ্রীন টি পিঁপড়া) বাসা তৈরি করে অসুবিধার সৃষ্টি করে।

ফল সংগ্রহ :

ফুল ফোটার পর থেকে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে ফল পুষ্ট হয়। পুষ্ট ফল হালকা সবুজ থেকে হলুদাভ সবুজ হয়ে থাকে। পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করার ২ থেকে ১ দিনের মধ্যে পাকতে শুরু করে এবং পাকলে তাড়াতাড়ি নরম হয়ে যায়। একটি গাছে প্রায় ১০০টি ফল ধরে।

পুষ্টিমান :

শরিফার শাঁসের প্রতি ১০০ গ্রামের মধ্যে ৭০.৫ থেকে ৭৩.৩ গ্রাম পানি, ১.৬ গ্রাম আমিষ, ২৩.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩.১ গ্রাম আঁশ, ১৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.০-৪.৩১ মিলিগ্রাম লৌহ, ৮৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ৪৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৮ মিলিগ্রাম জিংক ও ০.৬৪ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ এবং ১০৪ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে অল্প পরিমাণে থায়ামিন, রাইবোফ্লাবিন, নায়াসিন, ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে ঔষধ হিসাবে এর মূল্য অনেক।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

আরিও দেখুন
Close
Back to top button